দ্য বেঙ্গল ভয়েস
বাংলাদেশ আজ ভয়ঙ্কর এক সময় অতিক্রম করছে। বছরের প্রথম ছয় মাসেই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে— এটি আর সাধারণ কোনো শাসন নয়, বরং উপনিবেশিক শোষণের আদলে পরিচালিত একটি দুঃশাসনব্যবস্থা। এ শাসনের নেতৃত্বে রয়েছেন ইউনুস ও তার কথিত 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার'। তাদের মূল অস্ত্র এখন মব, উগ্র গোষ্ঠী, এবং ধর্মীয় চরমপন্থার রাজনীতি।
২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে দেশজুড়ে সংঘটিত হয়েছে ১৪১টি মব হামলা। এসব হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫২ জন, গুরুতর আহত হয়েছেন ২৮৯ জন। সর্বশেষ নৃশংস উদাহরণ কুমিল্লায়, যেখানে একই পরিবারের তিনজন সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় প্রকাশ্য দিবালোকে। প্রশাসন এ ঘটনায় কার্যত নির্বিকার। কোনো ন্যায়বিচার নেই, নেই জবাবদিহিতা। বরং সরকার সরাসরি দায়মুক্তি দিচ্ছে এসব অপরাধীদের। শুধু এই হামলাগুলোই নয়, বছরের প্রথম ছয় মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৮১ জন নারী, আর খুন হয়েছেন ৩২০ জন। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়— বাংলাদেশে নারী হয়ে বেঁচে থাকা আজ এক ভয়ঙ্কর ঝুঁকির নাম।
স্বাধীনচেতা নারীরা আজ রাস্তায় নিরাপদ নয়। যারা নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন, যারা চোখে চোখ রেখে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, তারা হামলার শিকার হচ্ছেন – হয়তো দিনের আলোতে, হয়তো রাতের অন্ধকারে। এসব হামলার পেছনে সক্রিয় রয়েছে জামায়াত, এনসিপি ও উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর মতো চরমপন্থী সংগঠনগুলো। তারা শুধু হামলা চালাচ্ছে না, একই সঙ্গে তৈরি করছে ভয় ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ, যা জনগণকে নিঃস্ব, ভীত ও বিপর্যস্ত করে তুলছে।
তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, সরকার এই চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদেরকে দায়মুক্তি দিচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এই মব গোষ্ঠীকে ‘প্রেসার গ্রুপ’ বলে অভিহিত করছেন। প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম প্রকাশ্যে বলেছেন, এরা মব নয়, বরং প্রতিবাদী জনতা। অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এই গোষ্ঠীকে ‘জুলাইয়ের বিপ্লবী জনতা’ আখ্যা দিয়ে তাদের কার্যত বৈধতা দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে সরকার এক ভয়ঙ্কর বার্তা দিচ্ছে- মব এখন সরকারের একটি রাষ্ট্রীয় যন্ত্র। যে যন্ত্রের মাধ্যমে সমাজে অরাজকতা তৈরি করে তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়।
এই পরিস্থিতি নিছক একটি রাজনৈতিক সংকট নয়। এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোর ওপর এক গভীর আঘাত। নিরাপত্তা বাহিনী, বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যমসহ সব কিছুই আজ কোণঠাসা। আর জনগণ? তারা বন্দি এক রাষ্ট্রে, যেখানে ন্যায়বিচারের চেয়ে ভয় বেশি।
এই দুঃশাসনের অবসান কবে হবে? আন্তর্জাতিক সমাজ কি এখনো নিশ্চুপ থাকবে? নাকি এখনই সময়, বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর?
দ্য বেঙ্গল ভয়েস: লেখক, কলামিস্ট, অনলাইন এক্টিভিস্ট